রুবেলা রোগ কী?রুবেলার কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!

রুবেলা রোগ কী?রুবেলার কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!

রুবেলাও এক ধরনের হাম।রুবেলা একটি সংক্রামক রোগ।অনেকে একে তিন দিনের হাম বলে থাকেন।এ-রোগে র‍্যাশ (ফুসকুড়ি) ওঠে আর গলার পাশে কানের লতির পেছনের গ্রন্থি ফুলে যায় ও ব্যথা অনুভূত হয়।

গর্ভধারণের তিন মাসের সময় রুবেলা ভাইরাস আক্রমণ করলে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে মা থেকে গর্ভের শিশু এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে গর্ভপাত, এমনকি গর্ভের শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।

এছাড়াও গর্ভস্থ শিশুটি চোখে ছানি বা হৃৎপিণ্ডের ত্রুটি নিয়ে অথবা বধির, মানসিক প্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও জন্ম নিতে পারে। একটু বেশি বয়সের শিশুর শরীরেও রুবেলা সংক্রমণের মারাত্মক লক্ষণ দেখা যেতে পারে। তাই এ-রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

রুবেলা রোগ কী?রুবেলার কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!

আপনি আরও পড়তে পারেন …… হাম রোগ কী? হাম এর কারণ,লক্ষণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ!মাম্পস রোগ কী?মাম্পস রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা!টিনিয়াসিস রোগ কী? ফিতাকৃমি যে রোগ ছড়ায়!

জার্মান হাম কী?

রুবেলা রোগটিকে অনেকে জার্মান হামও বলে থাকেন।

রুবেলা রোগের কারণ কী?

রুবেলা রোগ এর কারণ রুবেলা (Rubella) নামক ভাইরাস। এই ভাইরাস Rubivirus গণের সদস্য।রুবেলা ভাইরাস একটি আরএনএ (RNA) ভাইরাস।

রুবেলা যেভাবে ছড়ায়

রুবেলা আরএনএ (RNA) ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। এ-রোগের জীবাণু প্রধানত বাতাস থেকে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ শরীরে প্রবেশ করে। গর্ভবতী মায়েরা গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের সময় রুবেলা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে গর্ভস্থ শিশুটি রুবেলায় আক্রান্ত হতে পারে এবং শিশুটি জন্মগত জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যা কনজেনিটাল রুবেলা সিনড্রোম (congenital rubella syndrome) নামে পরিচিত।

রুবেলার লক্ষণ ও উপসর্গ

রুবেলার লক্ষণ ও উপসর্গ

এ রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হামের মতোই। এটি প্রায় ফ্লু-র মতো সংক্রামক। শিশুদের মধ্যে এটি সাধারণত খুব হালকা ধরনের হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। শরীরে জীবাণু প্রবেশের ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। হামের তুলনায় এ রোগে প্রাথ মিক উপসর্গ অনেক ম্লান থাকে। এ রোগের প্রধান লক্ষণ হলো-

  • শরীরে লাল রঙের দানা দেখা-দেওয়া। প্রথমে দানা মুখমণ্ডলে দেখা দেয় এবং পরে পাঁচ সাতদিনের মধ্যে সারা শরীরে দেখা যায়।
  • আক্রান্ত ব্যক্তি জ্বর হয়
  • সর্দিতে আক্রান্ত হয়
  • কাশি থাকে
  • গলাব্যথা হয়
  • চোখ লাল-হওয়া
  • হাড়ের জোড়া ও মাংসপেশিতে ব্যথা
  • বমি হওয়া
  • গ্রন্থি-ফোলা এবং বিশেষ করে ঘাড়ের গ্রন্থির সমস্যায় ভুগতে পারে।

রুবেলার ফলে সৃষ্ট জটিলতা

এ রোগের জটিলতা শিশুদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি হয়। এগুলো হলো:

  • সন্ধিবাত (আর্থ্রাইটিস)
  • মস্তিষ্কের প্রদাহ
  • নাক দিয়ে রক্ত-পড়া
  • প্রস্রাবে রক্ত-যাওয়া
  • খাদ্যনালিতে রক্ত-আসা

গর্ভাবস্থায় রুবেলাতে আক্রান্ত হলে গর্ভস্থ শিশুর নিম্নোক্ত জন্মত্রুটি দেখা যায়:

  • নবজাতকের ত্রুটিপূর্ণ চোখের গঠন
  • বধিরতা
  • জন্মগত হৃদরোগ
  • মানসিক ভারসাম্যহীনতা
  • শারীরিক প্রতিবন্ধকতা

রুবেলা হলে করণীয়

রোগীর দুর্বলতা লাঘব করার জন্য ঘনঘন তরল খাবার দিতে হবে।
জীবানুর আক্রমণ রোধ করার জন্য নিয়মিত গোসল করতে হবে।
প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত ফল খেতে হবে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছে দিতে হবে।

রুবেলার চিকিৎসা

এই অসুখটির চিকিৎসা বলতে উপসর্গ লাঘবকেই বোঝায়, যেমন জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখা, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, পুষ্টিমান রক্ষা করা, ইত্যাদি।

রুবেলা প্রতিরোধে করণীয়

রুবেলা প্রতিরোধের একমাত্র কার্যকর উপায় হলো টিকা প্রদান করা।রুবেলা রোগ বা জার্মান হাম সম্পর্কে মায়েদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সময়মতো টিকা দিতে হবে।১৫ মাস বয়স থেকে প্রাক-যৌবনে এবং গর্ভবতী নয় এমন মহিলাদের রুবেলার টিকা দিলে প্রায় ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হয় ।

রুবেলার টিকা দেয়ার নিয়ম

এ-রোগ প্রতিরোধের জন্য শিশুর বয়স ৯ মাস হলে এক ডোজ এমআর (মিজেলস-রুবেলা) টিকা ও ১৫ মাস পূর্ণ হলে হামের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হয়। কিশোরীদের বয়স ১৫ বছর পূর্ণ হলে এক ডোজ এমআর টিকা এক ডোজ টিটি টিকার সঙ্গে দিতে হবে। পরবর্তী পাঁচ ডোজ টিটি টিকা সময় অনুযায়ী শেষ করতে হবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে অথবা ক্যান্সার বা যক্ষ্মায় আক্রান্ত শিশু-কিশোরীকে এমএমআর (মিজেলস মাম্পস-রুবেলা) টিকা দেওয়া যাবে না।

গর্ভধারণে সক্ষম মহিলাকে টিকা দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে গর্ভধারণ অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। গর্ভাবস্থায় কখনোই এই টিকা দেওয়া যাবে না।

শিশুদের রুবেলার টিকা

রুবেলা প্রতিষেধক টিকা শিশুর ১৫ মাস বয়সে এমএমআর টিকা দেওয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়। সাধারণত নবজাতকের ১ বছর বয়স হলে এই টিকা দেওয়া যায় । অনেক সময় ৯-১০ মাসেও এই টিকা দেওয়া হয় তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ১ম ডোজ থেকে ২য় ডোজের ব্যবধান ৩ মাস হলে ভালো। তবে, কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ ব্যবধানে নিতে হবে।

যদি এই বয়সে এই টিকা নেওয়া না-হয়ে থাকে, তবে আপনি এবং আপনার পরিবারের সবাই এই টিকা যেকোনো সময় নিতে পারবেন। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা, যারা আগে এই টিকা নেয়নি তারা একটি ডোজ গর্ভধারণের তিনমাস আগে নিতে পারবে। সকল মেয়ে শিশু এবং মহিলাদের গর্ভধারণের আগেই রুবেলার টিকা নেওয়া উচিত।

এমএমআর টিকা গ্রহণের মাধ্যমে হাম, রুবেলা ও মাম্পস রোগ প্রতিরোধ করা যায়। রুবেলা নিয়ে কোনো শিশু যাতে জন্ম না নেয় এবং হাম, রুবেলা ও মাম্পসে আক্রান্ত হয়ে যাতে কোনো শিশু আর মারা না যায় সেজন্য ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ থেকে সরকার বিনামূল্যে এমএমআর টিকা দিতে শুরু করেছে। এই তিনটি রোগ প্রতিরোধ করতে সকলেরই বয়স অনুযায়ী এই টিকা নেওয়া জরুরি।

লেখক
ডা. রীনা দাস
আইসিডিডিআর,বি

ট্যাগঃ রুবেলা রোগ রুবেলা রোগ রুবেলা রোগ রুবেলা রোগ