স্বপ্নে বৃষ্টি,বিদ্যুৎ,বজ্রপাত, ঝর্ণা, নদী-নালা, খাল-বিল, নদীর পানি দেখার ব্যাখ্যা
আপনি আরও পড়তে পারেন …… স্বপ্নে মৃত মানুষ দেখা ব্যাখ্যা কী? …… স্বপ্নে তরবারি দেখলে কী হয়? … স্বপ্নে যুদ্ধের অস্ত্র দেখার ব্যাখ্যা … স্বপ্নে ঘোড়া, গাধা, খচ্চর এবং এদের রং দেখার অর্থ! … স্বপ্নে সাপ দেখলে কি হয়?স্বপ্নে বিচ্ছু, পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ দেখার অর্থ!
স্বপ্নে বৃষ্টি দেখার ব্যাখ্যা
স্বপ্নে বৃষ্টি দেখতে পাওয়া আল্লাহ্র সাহায্য ও রহমতের আলামত৷ অনুরূপ মেঘমালারও একই ব্যাখ্যা। কিন্তু যদি দেখা যায় সর্বত্র ব্যাপক হারে নয়; বরং নির্দিষ্টরূপে বিশেষভাবে কোন স্থান, বাড়ী-ঘর কিংবা মহল্লায় বৃষ্টিপাত হয়েছে,তাহলে সে অঞ্চলের বাসিন্দাদের উপর রোগ-ব্যাধি, কষ্ট-মুসীবত ও পার্থিব ক্ষয়ক্ষতির আধিক্য চলতে থাকবে। এদ্বারা প্রায় ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীদের প্রতি আগত বিপদের অর্থ বুঝানো হয়ে থাকে।
কেউ যদি স্বপ্নে দেখে আকাশ থেকে ঘি, মধু, যায়তুন তেল অথবা দুধ ইত্যাদি বর্ষিত হচ্ছে, তাহলে এর ব্যাখ্যা হবে উক্ত এলাকাবাসীর প্রতি খাদ্য-সামগ্রী, মালে গনীমত এবং সার্বিক কল্যাণের দুয়ার খুলে দেয়া হবে। একই ভাবে সকল উত্তম জিনিসের বৃষ্টিপাতের ব্যাখ্যা কল্যাণধর্মী অর্থে নেয়া যেতে পারে।
ঘটনা-১:
এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বর্ণনা করল, আমি স্বপ্নে দেখি বাদল নেমে এসেছে এবং আকাশ থেকে ঘি, মধুর বর্ষণ শুরু হয়েছে। আর লোকেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে তা থেকে কেউ বেশী কেউ স্বল্প মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে।এর ব্যাখ্যায় হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ বাদল অর্থ ইসলাম আর ঘি, মধুর অর্থ ইসলামের সৌন্দর্য। অনুরূপ প্রতিটি উত্তম জিনিসের বৃষ্টিপাত কল্যাণ আগমনের পরিচায়ক।
ঘটনা-২:
অনুরূপ আরেক ব্যক্তি হযরত জা’ফর সাদেক (রহঃ)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরয করতে লাগল-স্বপ্নে দেখলাম, আমি যেন একদিন একরাত বৃষ্টিতে ভিজেছি। ব্যাখ্যায় তিনি বললেন, উত্তম স্বপ্ন। যেন তুমি আল্লাহ্র রহমতে শরীর সিক্ত করার সুযোগ লাভে ধন্য হয়েছ। এটা তোমার নিরাপত্তা ও অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য লাভের ইঙ্গিত।
অপর এক ঘটনাঃ
এক ব্যক্তি স্বপ্ন দেখেছে বৃষ্টি যেন একেবারে তার মাথার উপর বর্ষিত হচ্ছে।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বললেনঃ দর্শনকারী লোকটি পাপাচারী।তার পাপরাজি সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং পাপের আধিক্য তাকে বেষ্টন করে নিয়েছে। তুমি কি আল্লাহর বাণী শুনতে পাওনি? (যার অর্থ- আর তাদের উপর আমি মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। ফলত সেই ভীতি প্রদর্শনকৃতদের উপর বর্ষিত সে বৃষ্টি কতই না মারাত্মক ছিল। -সূরা শুআরা : আয়াত ১৭৩)
স্বপ্নে বজ্রধ্বনি দেখার ব্যাখ্যা :
স্বপ্নে বাতাসের সাথে বজ্রধ্বনি শুনতে পাওয়া শক্তিশালী-অত্যাচারী বাদশাহ্ বা শাসকের আলামত। বিদ্যুতের চমক দেখতে পাওয়া মুসাফির ব্যক্তির জন্য ভীতি আর মুকীমের জন্য লোভ-লালসার নিদর্শন।কেননা, আল্লাহ্ বলেছেনঃ
هو الذي يريكم البرق خوفا وطمعا
(তিনিই আল্লাহ্, যিনি তোমাদেরকে ভয় এবং আশার জন্য বিদ্যুতের চমক দেখিয়ে থাকেন।
সূরা রা’দঃ আয়াত ১২)
এর ব্যাখ্যায় একথাও বলা হয়েছে যে, বৃষ্টির বর্ষণ ব্যতীত কেবল বিদ্যুতের চমক দেখতে পাওয়া মুকীম-মুসাফির উভয়ের জন্য ভীতির আলামত। পক্ষান্তরে বৃষ্টিপাতের সাথে বিদ্যুতের মিশ্রণ থাকা রোগমুক্তির চিহ্নস্বরূপ।
স্বপ্নে রংধনু দেখার ব্যাখ্যা :
স্বপ্নে আকাশে সবুজ বর্ণের ধনু দেখতে পাওয়া দুর্ভিক্ষ হতে নিরাপত্তার আলামত। হলুদ রং -এর হলে রোগ-ব্যাধির চিহ্ন আর লোহিত বরণ দেখতে পাওয়া রক্তপাতের নিদর্শন। এর ব্যাখ্যায় এটাও বলা হয়- স্বপ্নে রংধনু দেখা দর্শনকারী ব্যক্তির বিয়ের ব্যবস্থা হওয়ার পূর্ব-লক্ষণ।
স্বপ্নে বন্যা দেখার ব্যাখ্যা
স্বপ্নে বন্যা দেখতে পাওয়া শত্রুর আক্রমণের নিদর্শন। আর পরনালা গড়িয়ে পানি প্রবাহিত হওয়া সবুজ শস্য শ্যামল এবং অধিক ফলনের লক্ষণ।
স্বপ্নে মেঘমালা দেখার ব্যাখ্যা
এটি জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও রহমতের লক্ষণ, তাতে যদি আযাব-গযবের চিহ্ন দেখা না যায়। অর্থাৎ, তুফান কিংবা ঘোর অন্ধকার অথবা ধ্বংসকারিতার কোন চিহ্ন যদি বুঝতে পারা না যায়, তবে তা দ্বীন ইসলামের নিদর্শন। কেউ যদি স্বপ্নে দেখে সে মেঘের মালিক হয়ে গেছে, মেঘ জমা করার কাজে ব্যস্ত, মেঘমালার উপর দিয়ে সে হেঁটে বেড়ায় অথবা তাতে সে আরোহণরত, তাহলে উপরে উল্লিখিত বিষয়সমূহের মধ্য হতে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান বস্তুর সে মালিক হবে।
ঘটনা ঃ
বর্ণিত আছে- হযরত জা’ফর সাদেক (রহঃ)-এর নিকট আরয করা হল, এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখেছে সে মেঘখণ্ড খায় এবং তার সামনে আরো বহু মেঘমালা ছড়িয়ে রয়েছে। এর ব্যাখ্যায় তিনি বললেনঃ সে ব্যক্তি উত্তম স্বপ্ন দেখেছে। সে ইলমে দ্বীন হাসিল করবে এবং তার খ্যাতি দেশময় ছড়িয়ে পড়বে।সুনাম ও সম্মানের এত উচ্চ মর্যাদায় সে পৌঁছে যাবে, যেখানে উপনীত হওয়া অন্য কারো পক্ষে সম্ভব হবে না।
ঘটনা : তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞেস করা হল- এক লোক স্বপ্নে দেখল মেঘমালা যেন তার উপর ছায়া বিস্তার করে আছে।
এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বললেনঃ দর্শনকারী অসুস্থ হলে রোগমুক্ত হবে, ঋণগ্রস্ত হলে আল্লাহ্ তার ঋণ শোধ করার ব্যবস্থা করে দেবেন, দরিদ্র হলে আল্লাহ্ তার অভাব-অনটন দূর করে ধন-সম্পদ দেবেন আর নির্যাতিত হলে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তার প্রতি সাহায্য নেমে আসবে।কেননা, বাদল আল্লাহ্ পাকের রহমতস্বরূপ এবং তাতে যা কিছু আছে সবই রহমত হিসাবে গণ্য।উপরন্তু বহু বার এই মেঘমালা রসূলুল্লাহ্ (দঃ)-কে যুদ্ধক্ষেত্রে আপন ছায়ায় বেষ্টন করে রেখেছিল।
স্বপ্নে শিলা, বরফ ও তুষার দেখার ব্যাখ্যা
এ সমস্তই চিন্তা-উদ্বেগ, আযাব-গযব ও বিপদ-আপদের আলামত। তবে যে এলাকায় সর্বদা বরফ পতিত হওয়া স্বাভাবিক নিয়ম, সেখানে এর পরিমাণ সামান্য ও স্বল্পমাত্রায় দেখা গেলে স্থানীয় লোকদের জন্য তা শস্য-শ্যামল পরিবেশ ও দেশে অধিক ফলনের লক্ষণ।শিলাবৃষ্টির অবস্থাও একই ধরনের।
কেউ যদি স্বপ্নে দেখে, পাত্র থেকে সে আঁজলা ভরে পানি নিয়েছে, সে পানি তাতে জমাট হয়ে গেছে, তাহলে এর ব্যাখ্যা তার হাতে মাল জমা হওয়া এবং দীর্ঘদিন স্থায়ী থাকার লক্ষণ। আর শিলাবৃষ্টি দেখার মধ্যে কোন অবস্থায়ই কল্যাণের আশা নেই।স্বপ্নে কূপ দেখা দেখার ব্যাখ্যা স্বপ্নযোগে কূপ দেখা মূলধনপ্রাপ্তি ও আয়-উপার্জনের নিদর্শন।
কেউ কূপ খনন করছে দেখতে পেল। কিন্তু চেষ্টা সত্ত্বেও সে ব্যর্থ হয়ে গেছে। এর অর্থ, উপার্জনের ক্ষেত্রে সে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কিন্তু আশানুরূপ ফল পাবে না, তার প্রাপ্ত রুজির পরিমাণ হবে সামান্য। কোন ব্যক্তি আপন ঘরে কুয়া খনন করেছে মর্মে স্বপ্ন দেখল এবং তাতে পর্যাপ্ত পানি জমা হয়ে ফুলে উঠেছে। এটা তার অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া এবং বিনা পরিশ্রমে আল্লাহ্র পক্ষ হতে প্রচুর পরিমাণে পূত-পবিত্র মাল পাওয়ার নিদর্শন।
স্বপ্নে নদী দেখার ব্যাখ্যা
নদীর ব্যাখ্যা সাধারণত ছোট-বড় আকৃতিগত পার্থক্য হিসাবে মানুষ দ্বারা করা হয়। কেউ স্বপ্নে দেখল নদীতে নেমে সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। এর অর্থ-স্বপ্নে যে পরিমাণ ভীত-চিন্তাগ্রস্ত হয়েছে, বাস্তব জীবনেও সে তদ্রূপ ভয়-ভীতি ও চিন্তা-ভাবনার শিকার হবে। একই ভাবে নদীর পানি যদি নোংরা ময়লাযুক্ত হয়, কিন্তু পান করেছে সে নির্মল পরিষ্কার পানিই, তাহলে সে মঙ্গলের অধিকারী হবে এবং শান্তি ও নিরাপদে তার জীবন কাটবে।
কিন্তু নদীর পানি যদি নোংরা দেখে আর উক্ত পানিই সে পান করেছে মর্মে দেখতে পায়,তাহলে সে পানকৃত পানির সমপরিমাণ রোগ-ব্যাধি, দুঃখ-যাতনা,আপদ-বিপদের কবলে পতিত হবে।যে ব্যক্তি নদীর পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত হয়েছে মর্মে স্বপ্ন দেখতে পায়, সে ছোট-বড় নদীর ব্যাপ্তি ও বিস্তৃতি অনুপাতে কারো পক্ষ থেকে সম্পদের অধিকারী হবে।
কোন ব্যক্তি নদী কিংবা সাগরে গোসল করছে মর্মে স্বপ্ন দেখল, অথচ তার মনে ভয়-ভীতি, অপমান-লাঞ্ছনা, বিচলিত ভাব ইত্যাদির কোনটাই অনুভব হয়নি,অথবা ঝর্ণায় (খালে) গোসল করছে দেখতে পেল, তাহলে এর ব্যাখ্যা হবে-তার দুঃখ-কষ্ট ও মর্মপীড়া দূরীভূত হবে। ব্যাধিগ্রস্ত হলে রোগমুক্তি ঘটবে, মনে প্রফুল্লতা আসবে।
ঋণগ্রস্ত হলে আল্লাহ্ তাকে দায়মুক্ত করবেন। কোন প্রকার ভয়ের সম্মুখীন হলে আল্লাহ্ তাকে নির্ভয় করে দেবেন। অধিকন্তু কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলে মহান আল্লাহ্ তার কারামুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন। পবিত্র কালামে আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেছেন ঃ
ه ووهبناله أهله ومثلهم
أركض برجلك هذا مغتسل بارد وشراب
معهم رحمة منا وذكرى لأولى الألباب 0
অর্থ ঃ তোমার পা দিয়ে তুমি ভূমিতে আঘাত কর। পান ও গোসল করার জন্য এটি নির্গত এক শীতল ঝর্ণা বিশেষ। আমার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ এবং বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশস্বরূপ। তার পরিবারবর্গ ও তাদের ন্যায় আরও অনেক তাকে আমি দান করলাম। (সূরা সোয়াদ ঃ আয়াত ৪২)
(বলা বাহুল্য, আলোচ্য ব্যাখ্যা মূলত এ আয়াতের মর্ম থেকে উৎসারিত-অনুবাদক)
কেউ স্বপ্নে দেখল নদী পার হয়ে সে কূলে উঠে গেছে, তাহলে ব্যাখ্যা হবে তার ভয়-ভীতি, চিন্তা-কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
Tag: স্বপ্নে বৃষ্টি স্বপ্নে বৃষ্টি স্বপ্নে বৃষ্টি স্বপ্নে বৃষ্টি স্বপ্নে বৃষ্টি স্বপ্নে বৃষ্টি স্বপ্নে বৃষ্টি স্বপ্নে বৃষ্টি স্বপ্নে বৃষ্টি স্বপ্নে বৃষ্টি স্বপ্নে বৃষ্টি স্বপ্নে বৃষ্টি
Info source : dreamglosery
Please click on one Add to help us
মহাশয়, জ্ঞান বিতরণের মত মহৎ কাজে অংশ নিন।ওয়েবসাইট টি পরিচালনার খরচ হিসেবে আপনি কিছু অনুদান দিতে পারেন, স্পন্সর করতে পারেন, এড দিতে পারেন, নিজে না পারলে চ্যারিটি ফান্ডের বা দাতাদের জানাতে পারেন। অনুদান পাঠাতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩১৬৫৪০৪ বিকাশ,নগদ,রকেট।
এই ওয়েবসাইট আমার নিজের খরচায় চালাই। এড থেকে ডোমেইন খরচই উঠেনা। আমি একা প্রচুর সময় দেই। শিক্ষক হিসেবে আমার জ্ঞান দানের ইচ্ছা থেকেই এই প্রচেষ্টা। আপনি লিখতে পারেন এই ব্লগে। এগিয়ে নিন বাংলায় ভালো কিছু শেখার প্রচেষ্টা।